কার্ডিয়াক সার্জন ডা. আশ্রাফুল হক সিয়ামের সাফল্য
বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২০ জনের মতো চিফ কার্ডিয়াক সার্জন / ইউনিট চিফ রয়েছেন। তরুণ বয়সে আশ্রাফুল হক সিয়ামের এই এগিয়ে চলা বেশ আলোচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি ইতিহাস বলা যায়। দেশে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়াতেও এত তরুণ বয়সে কার্ডিয়াক সার্জন চিফ হওয়ার নজির বিরল।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের যতগুলো শাখা আছে তার মধ্যে অন্যতম একটি কার্ডিয়াক সার্জারি। সাধারণ মানুষের কাছে এটি বাইপাস সার্জারি বা হার্টের ভাল্ব বদল বা হৃদপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি অপারেশন নামে পরিচিত। বাংলাদেশে কার্ডিয়াক সার্জারির চিকিৎসা শুরু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ১৯৮১ সাল থেকে। দেশে এখন আনুমানিক ৫ হাজারের বেশি কার্ডিয়াক সার্জারি হয় যাতে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়।
এই কার্ডিয়াক সার্জারি যারা করেন তাদের কার্ডিয়াক সার্জন বলা হয়। একজন চিকিৎসকের কার্ডিয়াক সার্জন হয়ে ওঠা সহজ কোনো বিষয় নয়। তার জন্যে তাকে অনেক জটিল পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এরইমধ্যে দেশে মাত্র ৩৬ বছর বয়েসেই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের ইউনিট-৯ এর চিফ বা প্রধান হিসেবে দায়িত্বও পালন করছেন ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম। ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি এই দায়িত্ব পান।
২০০৫ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন আশ্রাফুল হক সিয়াম। এরপর এমএস করার জন্য বেছে নেন কার্ডিওভাসকুলার অ্যান্ড থোরাসিক সার্জারি। ২০১৬ সালে এমএস শেষ করে কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে যখন তিনি চিকিৎসা ক্যারিয়ার শুরু করেন তখন তার বয়স পঁয়ত্রিশ। ২৬তম ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব থোরাসিক অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার সার্জনস অব এশিয়া’ কনফারেন্সে সবচেয়ে তরুণ কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা পান তিনি।
এ বিষয়ে ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম বলেন, ‘কার্ডিয়াক সার্জারি অত্যন্ত জটিল একটি বিষয় যা একটি টিম ওয়ার্ক। বাইপাস সার্জারি, ভাল্ব সার্জারি, হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটিসহ অনেক জটিল অপারেশন করার জন্য দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, ধৈর্য এবং মেধার প্রয়োজন। এ জন্য একজন কার্ডিয়াক সার্জন ইউনিট চিফ হতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স ৪৫ বছর ছুঁয়ে ফেলেন।’
বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২০ জনের মতো চিফ কার্ডিয়াক সার্জন / ইউনিট চিফ রয়েছেন। তরুণ বয়সে আশ্রাফুল হক সিয়ামের এই এগিয়ে চলা বেশ আলোচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি ইতিহাস বলা যায়। দেশে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়াতেও এত তরুণ বয়সে কার্ডিয়াক সার্জন চিফ হওয়ার নজির বিরল।
তরুণ বয়সী এই সার্জন বলেন, ‘কার্ডিয়াক সার্জারি বেশ জটিল। ভুলের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দেশে কার্ডিয়াক সার্জারি করার উপযোগী হাসপাতালও বেশি নেই। এসব কারণে কার্ডিয়াক সার্জনরা এ ধরনের সার্জারি করার সুযোগ পান না। প্র্যাকটিসের অভাব থেকে কনফিডেন্সও কমে আসে সার্জনদের। আমাদের দেশে কার্ডিয়াক সার্জনের সংখ্যা ২০০-এর ওপরে কিন্তু চিফ সার্জন অনেক কম। আমি তরুণ বয়সেই চিফ কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে কাজ করছি, এটা সত্যি সম্মানের।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন আন্তর্জাতিক মানের কার্ডিয়াক সার্জারি হচ্ছে। এখানে সাফল্যের হার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রশংসনীয়। সরকারি হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যয় সহনীয় হলেও প্রাইভেট হাসপাতালে বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। এছাড়া হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতালেই কেবল কার্ডিয়াক সার্জারি করার প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জনবল রয়েছে।’